মানসিক বা রুহানি শক্তি বলতে সাধারণত মানুষের আত্মিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তিকে বোঝানো হয়। এটি একজন ব্যক্তিকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, আত্মাকে পবিত্র রাখা এবং মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
মানবজীবনে রুহানি শক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শক্তি মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, পাপ থেকে বিরত রাখে এবং সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করে। রুহানি বা আধ্যাত্মিক শক্তি একজন মানুষকে এমন অনেক অস্বাভাবিক কাজ করতে সক্ষম করে, যা সাধারণত অন্য কেউ করতে পারে না।
নিচে কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানসিক শক্তি অর্জনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো—
১.পাক-পবিত্র থাকা
পবিত্রতা রুহানি উন্নতির প্রধান ভিত্তি। নিয়মিত অজু ও গোসলের মাধ্যমে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পবিত্র রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহারাত ছাড়া ঈমানের অন্যান্য শাখাগুলি—যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জিকর, তিলাওয়াত, দান-খয়রাত ইত্যাদি—পূর্ণতা পায় না। এগুলোর মাধ্যমে মানুষের আত্মা পবিত্র হয় এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। দেহের পবিত্রতার সঙ্গে আত্মিক শুদ্ধতার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
২. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও তাওয়াক্কুল রাখা
আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মানসিক অস্থিরতা দূর করে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। কোরআনে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” (সুরা তালাক: ৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ তাওয়াক্কুল করতে, তবে তিনি তোমাদের পাখির মতো রিজিক দান করতেন।” (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৪৪)
৩. নির্জনে ইবাদত করা
নির্জনে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে। নবীজি (সা.) হেরা গুহায় নির্জনে ধ্যান করতেন। হাদিসে এসেছে, “এরপর নির্জনতা তাঁর কাছে প্রিয় হয়ে উঠল। তিনি হেরা গুহায় চলে যেতেন এবং সেখানে একনাগাড়ে ইবাদত করতেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯৫৩)
৪. ধৈর্য ধারণ করা
ধৈর্য মানসিক শক্তির অন্যতম উপাদান। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি ধৈর্যশীলদের তাদের পুরস্কার পরিপূর্ণভাবে দেব, কোনো হিসাব ছাড়াই।” (সুরা জুমার: ১০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “ধৈর্য হলো আলো।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৩)
৫. আল্লাহর জিকির করা
আল্লাহর স্মরণ মানসিক প্রশান্তি ও শক্তি জোগায়। কোরআনে বলা হয়েছে, “কেবল আল্লাহর জিকিরেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।” (সুরা রাদ: ২৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে, আর যে করে না, তাদের উদাহরণ জীবিত ও মৃতের মতো।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪০৭)
৬. কোরআন পাঠ ও তা নিয়ে চিন্তা করা
কোরআন পাঠ এবং তার অর্থ অনুধাবন মানসিক শক্তি বাড়ায়। আল্লাহ বলেন, “আমি কোরআনে মুমিনদের জন্য শেফা (আরোগ্য) এবং রহমত নাজিল করেছি।” (সুরা আল-ইসরা: ৮২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২৭)
৭. দোয়া করা
দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা মানসিক শক্তি অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া করতেন:
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি শক্তিশালী ঈমান, সত্যিকারের ধৈর্য ও মনের প্রশান্তি।” (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৮৫)
৮. যথাসময়ে নামাজ আদায় করা
নামাজ মানসিক প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস দেয়। আল্লাহ বলেন, “তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।” (সুরা বাকারাহ: ৪৫)
৯. আখিরাতের প্রতি মনোযোগ দেওয়া
আখিরাতের চিন্তা দুনিয়ার পরীক্ষাগুলোকে সহজ মনে করতে সহায়তা করে। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল খেলা ও মজা, কিন্তু আখিরাতের আবাসই হলো চিরস্থায়ী।” (সুরা আনকাবুত: ৬৪)
১০. পাপ থেকে দূরে থাকা
পাপ মানুষের মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে। আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জন্য সংকীর্ণ জীবন নির্ধারিত।” (সুরা ত্বহা: ১২৪)
১১. ভালো সঙ্গ বেছে নেওয়া
ভালো সঙ্গ মানসিক শক্তি বাড়ায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের ওপর চলে, তাই কাদের সঙ্গে মিশছ তা দেখে নাও।” (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৭৮)
১২. রোজা রাখা
রোজা ধৈর্য শেখায় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ায়। আল্লাহ বলেন, “রোজা তোমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সুরা বাকারাহ: ১৮৩)
উপরের আমলগুলো নিয়মিত অনুশীলন করলে একজন মানুষ মানসিক ও রুহানি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠবে।
Post a Comment